ক্ষুদিরাম বসু: ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সর্বকনিষ্ঠ এক বিপ্লবী

আমি ভালো বোমা বানাতে পারি, মৃত্যুর
আগে সারা ভারতবাসীকে সেটা শিখিয়ে দিয়ে যেতে চাই।’
————–ক্ষুদিরাম ।

ফাঁসিতে ঝোলানোর আগে কারা কর্তৃপক্ষ যুবকটির কাছে জানতে চাইল, মৃত্যুর আগে তাঁর শেষ ইচ্ছা কী? উপরুক্ত কথা 
শুনেতো  কারা কর্তৃপক্ষ বিস্মিত ! এভাবেই ক্ষুদিরাম  শিখিয়ে গেছেন দেশপ্রেম কাকে বলে।
১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট ভোর পাঁচটায়  ব্রিটিশ সরকার ক্ষুদিরামকে ফাঁসিতে ঝোলায়। নিভে যায় অকুতোভয়, দেশপ্রেমের উজ্জল নক্ষত্র ক্ষুদিরাম বসু ।
বাইরে তখন হাজার হাজার জনতার বন্দে মাতরম ধ্বনিতে প্রকম্পিত । পুর্বের দুই ভাই মৃত্যূবরণ করায় পিতামাতা তাকে বিক্রি করে দেন তৎকালীন বিশ্বাসছিলো এতে সে বেঁচে যাবে। ক্ষুদিরামের মা এর বড় বোনের কাছে তিন মুঠি খুদের (শস্যের খুদ) বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। খুদের বিনিময়ে ক্রয়কৃত শিশুটির নাম পরবর্তীতে ক্ষুদিরাম রাখা হয়। ক্ষুদিরাম বসু পরবর্তিতে তার বড় বোনের কাছেই বড় হন।

 

আটক হওয়ার পর ক্ষুদিরাম বসু

সাত বছর বয়সে তিনি বাবা মারা হারান । তাঁর আশ্রয় হয় দুর সম্পর্কের এক দাদা ও বৌদির কাছে। কিন্তু সেখানে তাঁকে অমানবিক অত্যাচার সহ্য করতে হয়।
অশান্তিতে তাঁর মন ভরে উঠে। সঙ্গী হয় দুঃখ আর একাকীত্ব। তখনকার দিনের কুসংস্কার তাঁকে মোটেও স্পর্শ করতে পারেনি। বরং সমাজের মানুষের মধ্য থেকে কুসংস্কার দূর করার জন্য চেষ্টা চালান তিনি। এজন্য তাঁকে অনেকের বকাবকি খেতে হয়েছে। এক পর্যায়ে স্কুল ছেড়ে দিলেন। মেধাবী, দুরন্ত এবং কিছুটা বাউন্ডুলে স্বভাবের কিশোর ক্ষুদিরাম ১৯০৩ সালে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেপড়াশুনা বন্ধ করে দেন। এ সময় তিনি ঝুঁকে পড়েন দুঃসাহসিক কর্মকাণ্ডে। অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করারসংকল্প গ্রহণ করেন তিনি।
১৯০২-০৩ সালে যখন বিপ্লবী নেতা শ্রী অরবিন্দ এবং সিস্টার নিবেদিতা মেদিনীপুর ভ্রমণ করে জনসম্মুখে বক্তব্য রাখেন এবং
বিপ্লবী দলগুলোর সাথে গোপন পরিকল্পনা করেন, তখন তরুণ ছাত্র ক্ষুদিরাম বিপ্লবে যোগ দিতে অনুপ্রাণিত হন। এখানেই তার
বিপ্লবী জীবনের অভিষেক। ১৯০২ সালেই তিনি বিপ্লবীদের একটি নবগঠিতদলে যুগান্তরে যোগদান করেন। অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই ক্ষুদিরাম তার গুণাবলীর জন্য সবার চোখে গুরুত্বপূর্ণএবং দলের সক্রিয় সদস্য হয়ে ওঠেন।

সেইসময়ে তিনি বিলাতি দ্রব্য বয়কট, বিলাতি লবণের নৌকা ডোবানো প্রভৃতি কর্মকাণ্ডের ভেতর দিয়ে স্বদেশী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯০৬ সালে মেদিনীপুরের এক প্রদর্শনীতে বিপ্লবী পত্রিকা ‘সোনার বাংলা’ বিলি করার সময়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েও পুলিশকে মেরে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
এই অভিযোগে পরে আবার গ্রেফতার হন। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
কিন্তু বয়স নিতান্তই অল্প বলে সরকার কর্তৃক মামলাটি প্রত্যাহার হয়ে যায়। বিপ্লবীদের গোপন সংস্থায় অর্থের প্রয়োজনে ১৯০৭-এ
মেলব্যাগ লুটে অংশ নেন।

 

আলিপুর আদালত প্রাঙ্গনে বন্দেমাতরম ধ্বনি উচ্চারণ করার অপরাধে কলকাতার প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড
সুশীল সেন নামক ১৬ বছরের এক কিশোরকে প্রকাশ্য স্থানে বেত মারার আদেশ দেন। এই শাস্তির বদলা নিতে ও সেই সময় বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দমনমূলক কার্যকলাপের জন্য যুগান্তর দল কলকাতার চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট অত্যাচারী কিংসফোর্ডকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়।
ইতিমধ্যে গোপন সূত্রে খবর পেয়েনিরাপত্তার কারণে কিংসফোর্ডকেবিহারের মজফফরপুরে বদলি করা হয়।সেখানে তাকে হত্যার দায়িত্ব পড়ে ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকীর ওপর।
১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল রাত ৮টার সময় ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী রাতেরঅন্ধকারে কিংসফোর্ডের গাড়ি ভেবে ভুলকরে
ঘোড়ারগাড়িতে বোমা নিক্ষেপ করেনিরপরাধ কেনেডি সাহেবের স্ত্রী মিসেসকেনেডি ও তার কন্যাকে হত্যা করেন।
অত্যাচারী কিংসফোর্ডকে হত্যারপরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। ক্ষুদিরাম বসু হত্যাকান্ডের স্থল থেকে ২৫ মাইল দূরেওয়েইনি স্টেশনে পরদিন ধরা পড়েন।অপর বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকীকেও ধরারচেষ্টা হলে তিনি নিজের রিভলবারেরগুলিতে আত্মঘাতী
হন। কয়েক মাসবিচারের পর তাঁর ফাঁসির হুকুম হয়।
ফাঁসির আদেশ শুনে ক্ষুদিরাম বসু হাসিমুখে বলেন যে, মৃত্যুতে তাঁর কিছুমাত্র ভয় নাই।

অবশেষে ১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট ভোর পাঁচটায় ব্রিটিশ সরকার ক্ষুদিরামকে ফাঁসিতে ঝোলায়। নিভে যায় অকুতোভয়,দেশপ্রেমের উজ্জল নক্ষএ ক্ষুদিরাম বসু ।
সারা ভারত শোকে কাতর মূর্ছনায় শোক মাতম,

একবার বিদায় দে-মা ঘুরে আসি।
হাসি হাসি পরব ফাঁসি দেখবে জগৎবাসী।