চিলড্রেন অফ হ্যাভেন

[su_box title=”চলচ্চিত্রের তথ্য” style=”soft”]
চলচ্চিত্রঃ চিলড্রেন অফ হ্যাভেন
দৈর্ঘ্যঃ ৯০ মিনিট
রঙঃ আংশিক রঙিন
দেশঃ ইরান
ভাষাঃ ফার্সী
সালঃ ১৯৯৭
চিত্রনাট্য ও পরিচালনাঃ মাজিদ মাজিদি
প্রযোজনাঃ আমির এশফানদিয়ারি, মোহাম্মদ এশফানদিয়ারি
অভিনয়ঃ আমির ফারুখ হাশেমিয়ান, বাহারে সিদ্দিকি, মোহাম্মদ আমীর নাজি, ফেরেস্তে সারাবান্দি
সঙ্গীতঃ কেভান জাহানশাহি
চিত্রগ্রহণঃ পারভেজ মালেকজাদি
সম্পাদনাঃ হাসান হাসানদোস্ত [/su_box]

ইরানী সিনেমা আমার বরাবরই পছন্দের। ইরানী সিনেমায় একটা অন্য ধাঁচের ফ্লেভার পাওয়া যায় সবসময়। ইরানের ফিল্ম ইন্ডাষ্ট্রিতে বেশ কিছু জিনিয়াস ফিল্মমেকার আছেন, তাদের মধ্যে মাজিদ মাজিদি অন্যতম। তাঁর প্রত্যেকটা সিনেমাতেই কিছু না কিছু ম্যাসেজ দেয়া থাকে। তাঁর সিনেমার স্টোরিটেলিং থেকে শুরু করে দৃশ্যধারণ, অভিনয় সবকিছুই বেশ ভালোলাগার মতো। আজ খিচুড়ির এই আর্টিক্যালে থাকছে মাজিদ মাজিদি’র নির্মিত ‘চিলড্রেন অফ হ্যাভেন’ সিনেমা নিয়ে দুই এক লাইন কথা।
এন্ড অবভিয়াসলি স্পয়লারস অ্যাহেড!

চিলড্রেন অফ হ্যাভেন চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য

আলী দরিদ্র পরিবারের ছেলে। সে বাজার করতে এসে এক ফাঁকে তার বোনের জুতাটি সারাতে নিয়ে আসে। আনফরচ্যুনেটলি জুতাজোড়া ময়লাওয়ালা নিয়ে যায়। এই জুতাজোড়া নিয়েই শুরু হয় এই সিনেমার কাহিনী!
আলীর বাবা পাঁচ মাস যাবৎ বাসা ভাড়া দিতে পারে না, মুদি দোকানদারের বাকি টাকা পরিশোধ করতে পারে না; এমতাবস্থায় তার ছোটবোন জাহরার জন্য এই মূহুর্তে জুতা কেনার প্রশ্নই আসে নাহ। আলী ছোটবোনকে রিকুয়েস্ট করে যেনো জুতা হারানোর ব্যাপারটা তার বাবার কাছে না বলে! আলী আইডিয়া বের করে- ছোট বোন তার জুতা পরে স্কুলে যাবে, সে ফিরে এলে সেই জুতা পরে আলী স্কুলে যাবে। কিন্তু এই উপায়ে দুইজনকেই দৌড়িয়ে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় মিলিত হতে হয় আর আলী প্রায়শই স্কুলে দেরী করতে থাকে।

একদিন জাহরা অন্য এক ছাত্রীর পায়ে তার জুতাটি দেখে এবং তার ভাইকে জানায়। তারা সেই মেয়েটাকে অনুসরণ করতে থাকে এবং এক পর্যায়ে তারা দেখে যে ওই মেয়েটার বাবা অন্ধ আর তারা আরো দরিদ্র। এই অবস্থা দেখে আলী ও জাহরা ফিরে আসে। একসময় আলী তার বাবার সাথে শহরে কাজের খোঁজে যায়। তেহরানে এক বাড়ির বাগানের কাজ পেয়ে যায় তাঁরা। আলী সে বাড়ির ছয় বছরের বালকের সাথে খেলাধূলা করে আর তার বাবা কাজ করে।
একদিন হঠাৎ আলী জানতে পারে একাধিক স্কুলের ছাত্রদের মধ্যে দৌড় প্রতিযোগিতা হবে আর সেই প্রতিযোগিতার তৃতীয় পুরষ্কার হচ্ছে ভ্যাকেশনে ক্যাম্প করা ও একজোড়া জুতা! বোনের জুতার কথা চিন্তা করে আলী দৌড় প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করে। কিন্তু সে তৃতীয় হওয়ার টার্গেট নিয়ে মাঠে নামলেও প্রথম হয়ে যায়।
এদিকে দেখা যায়, আলীর বাবা সাইকেলে করে নতুন জুতা ঝুলিয়ে নিয়ে আসছে। শেষদৃশ্যে দেখা যায়, আলী পানির মধ্যে তার ফোস্কা পড়া পা ভেজাচ্ছে। আর ব্যাকগ্রাউন্ডে শোনা যায়, আলী তাঁর জীবনে দৌড়বিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়!

এই হচ্ছে ‘চিলড্রেন অফ হ্যাভেন’ সিনেমার গল্প। আমার কাছে বেশ অসাধারণ লেগেছে। জুতা নিয়ে গল্পটা যেভাবে এগিয়েছে তা এককথায় অসাধারণ! যারা সিনেমাটা দেখেছেন তাদের কাছে অবশ্যই ভালো লেগেছে সিনেমাটি; আর যারা দেখেননি তাঁরা অবশ্যই দেখে নিবেন এই সুন্দর সিনেমাটি! মাজিদ মাজিদি সাদামাটা কাহিনীকে যেভাবে ক্যামেরাবন্দি করে রাজনৈতিকভাষ্য তৈরি করলেন তা ইরানি সিনেমার তো বটেই সকল ফিল্মমেকারদের জন্য একটা গল্পহীন গল্পও তৈরি করে রাখলেন।

 

চিলড্রেন অফ হ্যাভেন চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য

বিশেষ তথ্যঃ
এ সিনেমাটিকে ভিত্তোরিও দি সিকা’র ক্ল্যাসিক ‘বাইসাইকেল থিবস’এর সঙ্গে তুলনা করেছেন অনেক ক্রিটিকরা। ইরানে মুক্তির পর সিনেমাটি বহু জাতীয় পুরস্কার পায়। ১৯৯৯ সালে আমেরিকায় মুক্তি পাওয়ার পর এই সিনেমা বক্স অফিস হিট করে আর ক্রিটিকদের আকুন্ঠ প্রশংসা অর্জন করে। এই সিনেমা অস্কারে সেরা বিদেশী চলচ্চিত্রের মনোনয়ন পায়। অস্কার মনোনয়নের পরপরই এই সিনেমাটি ইউরোপ আমেরিকা, এশিয়ার একাধিক চলচ্চিত্র উৎসবে স্থান পায়। ভারতীয় নির্মাতা প্রিয়দর্শন এই সিনেমার হিন্দি রিমেক করেছেন ২০১০ সালে। নাম ছিলো ‘বাম বাম বোলে’। সিঙ্গাপুরের চলচ্চিত্র নির্মাতা জ্যাক নিও এই সিনেমার অবলম্বনে ২০০৩ সালে ‘হোমরান’ নামে একটি সিনেমা তৈরি করেন। ‘হোমরান’ ২০০৩ সালে গোল্ডেন হর্স পুরস্কার জিতে নেয়।