ছক্কুদা ও জগা খিচুড়ি প্রজেক্ট

আমাদের ছক্কুকে চেনেন? না চেনার কথা। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে যেমন সবাই চেনেনা তেমনি উদিয়মান প্রতিভাগুলোকেও অনেকেই চিনেনা। তবে ছক্কুর বিষয়টা অবশ্য পৃথক। কারন তার প্রতিভা এরিষ্টটলের মত এত দিকে বৃদ্ধি পেয়েছে যে সে কোনটা রেখে কোনটার চর্চা করবে ভেবে পায়না। ফলসরূপ আজ দেখা যায় ও কালো কাপড় গায়ে দিয়ে,চোখে চশমা লাগিয়ে কয়েকজন সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে গোয়েন্দাগিরিতে নেমেছে। আবার কালকেই দেখা যায় ,সালফিউরিক এসিডে পানি মিশিয়ে তাতে পিতল ,তামা দিয়ে ভোল্টার কোষের উন্নয়ন সাধন করছে। আবার কিছুখন পরেই ওকে দেখা যায় খেলার মাঠে একটা ইট ছুড়ে তার গতি ,পড়ন্ত বস্তুটির ত্বরন ইত্যাদী নিয়টনিও গবেষণায় মেতে আছে। পরিশেষে সাপ্তাহ ঘুরতে দেখা যায় সে ,গোয়েন্দাগিরি করতে গৃহকর্তা বুঝে ডাকাতের হাতে সব মালামাল দিয়ে  ডাকাত বুঝে গৃতকর্তাকে আচ্ছা মত রাম ধোলাই লাগিয়ে হাজতে। ভোল্টার কোষের উন্নয়ন সাধন করতে গিয়ে ঘরে আগুন ধরানো। আর নিয়টনিও গবেষনার ফসল তাঁর চাচার টাঁক মাথায় ভয়ানক রকম একটা আলু বিশেষ তৈরী। 

 

এইতো এবার তো পরিচয় শেষ হল আমাদের ছক্কুর সাথে। ও আমাদের ছক্কুর আর একটা নাম আছে। তা হল ‘ছক্কুদা’। পাড়ার সবার ও ভাই। এমনকি গোপন সূত্রে আমি জানতে পেরেছি যে ,ওর বাবাও নাকি ওকে ছক্কুদা বলে ডাকে। 

 

এতোসব চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে অবশেষে একটা  সিদ্ধান্ত নিয়েই নিল ছক্কুদা।
সে এক বিরাট ব্যপার।  একটা ক্লাব তৈরী করবে সে। কিন্তু ..সিদ্ধান্ত তো আর বেদ বেদান্ত সূত্রনা যে ,জপলেই কাজ হবে। এর জন্য অনন্ত নিত্য কাজ করতে হবে। অর্থ্যাত্ কিনা কাজেই সফল। তা সেদিন রাস্তার পাশের সস্তা একটা চায়ের দোকানে স্বচায়ের বলেই ছক্কুভাইয়ের দেখা মিলল। সেই ছক্কুদা। লাল শার্ট ,কালো প্যান্ট ,সাদা কেডস পায়। প্যান্টটা নিচে একটু ভাঁজ করা। সেখানে গোপাল ভাঁড়ের মত করে  দাঁত চেগিয়ে আছে দুটো মোজা। আলাদা নয় একদম মলাট থেকে কেটে এনে নিজের পায়ে সেটে দিয়েছেন। বেচারা পা। ভাগ্যই তোদের খারাপ। পড়বি তো পড়বি এমন লোকের কাছে পড়েছিস যে কিনা ,চৈত্র মাসের গরমেও তোকে আপাদমস্তক মোজার আড়ালে মুড়িয়ে রাখবে। 

কখন থেকে যে দরজায় দাড়িয়ে মুখে একটা হাত পুড়ে জোরে সোরে মস্তিস্কের কোনার অফিসে বিরাট পরিসরে চিন্তার জ্বাল বিছিয়ে …গুছিয়ে নেবার চেষ্টায় আছি। 

ঠিক তখুনি কে যেন আমায় বকল। না না ওটাকে বকা বলেনা ,ওটা ধমকানি। ধমকানি বললে অন্যায় হবে। নিছক বলা যেতে পারে জ্বোরে ডাক দেওয়া। এটাই সই। কিন্তু ডাকটা দিলকে। ভাল করে চারপাশ তাকালাম। স্টলটা একদম ফাকা – ফকফকা। কোন মানুষ নেই। ও কিরে বাবা মস্তিস্ক? বেকে বসেছিস নাকি?  ওইতো সামনেই দিব্বি বিরাট ভুড়িওয়ালা একটা লোক বসে আছে। ছক্কু ভাই। ও হ্যা স্ক্যানে ভুল বাবা? এ? ওটা মানুষ নয়? 

থাম ! বেশ একটা ঝাড়ি দিলাম ওটাকে। দিব্বি দেখতে পাচ্ছি একটা মানুষ। হাত আছে ,পা আছে ,নখ আছে ,চুল আছে ,মাথা আছে ,মাথার ভেতরে মস্তক …

কি বলহে?  মস্তক নেই? বেশ ভাল রসিকথা শিখেছ তো? 

যা হোক স্পষ্টভাবে আরেকটা ডাক শুনলাম। ছক্কুদার ঠোট নড়ছে। হুম অংক এতখনে মিলল। ডাকছেন ওনিই। 

:- হ্যারে জগা তুইতো বেশ পাতলা হয়ে গেছিস রে?  মনে হচ্ছে হাওয়া দিতেই উড়ে যাবি? 

বলে কি ছক্কুদা। পাতলা কি আর সাধে হয়েছি?  বাংলা সিনেমায় নাম লিখিয়েছি। পাতলা খান নাম নিয়েছি। তো তো পাতলা হতেই হবে।

: বুঝলি আমি কিন্তু শিগগির বিখ্যাত ব্যক্তিদের সাথে নাম লেখাইমু। 

: তা আবার কি গো ছক্কু দা ! পাতলা বলার হালকা পাতলা অপমানটা ভালভাবে পাতিয়ে হজম করে নিয়ে বললাম , তোমার ঐ মোটা খাতাটায় বুঝি তাদের নাম লিখে মাঝখানে আলগোছে বসিয়ে দেবে বুঝি। 

ছক্কুদার হাতে ধরা মোটা খয়েরি রঙ্গের খাতাটার প্রতি ইঙ্গিত করে বললাম। 

: হতচ্ছাড়া ,হাদারাম কি বললি তুই?  হাসফাসে না গিয়ে ফুস করে উঠলেন তিনি। 

: এই খাতায় নয় ,একদম পরিস্কার  সংবাদ পত্রে দেখতে পাবি। বুঝলি?  কপালখানা প্রসন্ন হলে চার পাঁচটা খাতে নোবেল পেয়েও যেতে পারি। নিদেন পক্ষে ১টা খাতে তো মাস্ট। তখন দেখবি রবীন্দ্রনাথ আর ডঃ ইউনুস এর  পাশে আমার নামখানা কিরম করে জ্বলমল করে। হেডিংটা হবে এই রকম ,রবীন্দ্রনাথ আর ডঃ ইউনুসের পর নোবেল পেলেন আরেক বাঙালী ,নাম …

: ছক্কুদা সর্বদালয়। 

কথাটা শেষ করলাম আমিই। বলেই কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। 

: আরেব্বাস কি যেন একটা উপাধী দিলি? 

আনন্দের স্বরে বলল ছক্কুদা। 

: সর্বদালয়। 

: হুম ! তবে ছক্কুদা টা রাখা যাবেনা। বুঝলিরে জগা আগেই নামটাম ভেবে রাখি ,পরে সাংবাদিকদের সামনে নাম নিয়ে না একটা কেলেঙ্কারি বেঁধে যায়। 

: ঠিক বলেছ ছক্কুদা। যশের সাথে নামের চেঞ্জ। দেখলেনা আমাদের পাড়ার হাবুটা কিভাবে ব্যবসা করে হাবিবুর রহমান হয়ে গেল !

উত্সাহ পেয়ে কথা বাড়ালাম আমি। 

: হুম !ঠিক কথা। 

বেশ চিন্তিত দেখাল ছক্কুদাকে।